আল কুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত

Suspendisse sed gravida erat, ac condimentum ipsum. In eu odio dignissim, dapibus nibh nec
90 / 100

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:– দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন আসে—এভাবে দিনরাতের আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে পেরিয়ে যায় সপ্তাহ মাস দিন বছর। কেটে যেতে থাকে আমাদের জীবন। যুগের পর যুগ, শতাব্দ, সহস্রাব্দ। দিনরাতের এ আবর্তন চলছেই। আমাদের জীবন তো একটা সময় থেমে যায়। দুনিয়ার বুকে নিঃশ্বাস নিতে পারার সময়টা কারো একটু বেশি, কারও কম। কম-বেশি যাই হোক, একটা সময় শেষ হয়েই যায়। কিন্তু দিনরাতের আবর্তনের যেন শেষ নেই, চলছে তো চলছেই। কোনো বিরাম-বিশ্রামও নেই, এমনকি গতিতে ছন্দপতনও নেই। একই গতিতে চলছে দিনরাতের এ পালাবদল।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিন আর রাত চেনে না—এমন কে আছে! দিনের বেলায় আলো ঝলমল আকাশ, সকালের স্নিগ্ধ বাতাস, দুপুরের প্রখর রোদ, বিকেলের নিষ্প্রভ সূর্য আর রাতের বেলায় চারিদিকে ছেয়ে যাওয়া অন্ধকার, আকাশভরা তারা, পূর্ণিমার রাতের ভরাট চাঁদ, অমাবস্যায় আবার চাঁদহীন কালো আকাশ—এসবের সঙ্গে পরিচিত নয়Ñএমন কে আছে! এগুলো সবই আমাদের জীবনের অতি সাধারণ কিছু অনুষঙ্গ। কিন্তু এ অতি সাধারণ বিষয়গুলোতেই আমাদের জন্যে ছড়িয়ে আছে বহু নিদর্শন, সেসব আমাদেরকে আল্লাহ তাআলার অসীম প্রজ্ঞা ইলম আর কুদরতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। পবিত্র কুরআনে নানা আঙ্গিকে আমাদের জন্য রাতদিনের নিদর্শনগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। লক্ষ করুনÑ

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- এ জগৎ এবং জগতের সবকিছু মহান আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেন এবং পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণও করেন। তাঁর ইচ্ছার বাইরে একটি শুকনো পাতাও গাছ থেকে ঝরে পড়তে পারে না। সে হিসেবে দিনরাতের বিষয়টি তো আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। তবুও আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবেÑ

وَ هُوَ الَّذِیْ خَلَقَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ وَ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ.

তিনি সে-ই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। Ñসূরা আম্বিয়া (১৯) : ৩৩

অর্থাৎ রাত ও দিন তাঁর সৃষ্টি, যেমন তিনি সৃষ্টি করেছেন চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-তারা। তাঁর সৃষ্টির বাইরে নয় জগতের কোনোকিছুই।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- রাত-দিনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়—বিরতিহীন আবর্তন। এ আবর্তনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা নিহিত রেখেছেন জ্ঞানীদের জন্যে উপদেশ। তিনি ইরশাদ করেছেন—

اِنَّ فِیْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ اخْتِلَافِ الَّیْلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الْاَلْبَابِ.

নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। Ñসূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯০

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- এ নিদর্শন আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরতের নিদর্শন; তাঁর সীমাহীন শক্তি ক্ষমতা ও রাজত্বের নিদর্শন, তিনি সর্বশক্তিমান হওয়ার নিদর্শন, তিনি যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন এবং তাঁর ইচ্ছাতেই জগতের ছোট-বড় সব বিষয় সংঘটিত হওয়ার নিদর্শন। রাত-দিনের আবর্তন যে আল্লাহ তাআলার বহু নিদর্শনের ধারক—এ বিষয়টি পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এসবের উপস্থাপনাও বড় বৈচিত্র্যময়। যেমন, সূরা আলে ইমরানের উপরোক্ত আয়াতে সরলভাবেই বলা হয়েছে—রাতদিনের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে বহু নিদর্শন।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- সূরা বাকারার ১৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে—রাতদিনের আবর্তনের মধ্যে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। সূরা ইউনুসের ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে—রাতদিনের আবর্তনের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্যে। অর্থাৎ যারা জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, তারাই চিন্তা করবে। যারা মুত্তাকী, আল্লাহ তাআলার ভয় সর্বদা যাদের অন্তরে জাগ্রত থাকে, তারাই তো আল্লাহ তাআলার কুদরত ও ক্ষমতা নিয়ে ভাববে। এ ভাবনাচিন্তাই জ্ঞানী বুদ্ধিমান ও মুত্তাকীদের সামনে আল্লাহ তাআলার পরিচয় তুলে ধরবে; আল্লাহ তাআলার ক্ষমতা ও রাজত্বের বিশালতা, এ জগতে তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয় ফুটিয়ে তুলবে। এর ফলশ্রুতিতে তারা মহান প্রভুর দরবারে লুটিয়ে পড়বে অধিকতর বিনয়ী মন নিয়ে কৃতজ্ঞতার সিজদায়।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত

কোনো কোনো আয়াতে আবার রাত ও দিনের বিভিন্ন অবস্থার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলার অপরিসীম ক্ষমতা ও শক্তির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন—

تُوْلِجُ الَّيْلَ  فِي النَّهَارِ وَ تُوْلِجُ النَّهَارَ فِي الَّيْلِ.

আপনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান আর দিনকে প্রবেশ করান রাতে। Ñসূরা আলে ইমরান (৩) : ২৭

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- একেবারে আমাদের চোখে দেখা এক বাস্তবতা। গ্রীষ্মকালে দিন হয়ে যায় অনেক দীর্ঘ, আর রাত হয়ে পড়ে অনেক ছোট। দিন-রাত কোনোটাই বার ঘণ্টায় থাকে না। আবার কদিন পর যখন শীতকাল আসে, তখন রাত হয়ে যায় দীর্ঘ, দিন হয়ে পড়ে ছোট। গ্রীষ্মকালের দিনের শুরু ও শেষের অংশটুকু শীতকালে রাতের অংশ হয়ে পড়ে। আবার শীতকালের রাতের শুরু-শেষের বেশ কিছু সময় গ্রীষ্মকালে দিনের অংশ হয়ে যায়। এভাবে দিন ঢুকে যায় রাতের মধ্যে, রাত ঢুকে যায় দিনের মধ্যে। ঘড়ির কাটায় একটা নির্দিষ্ট সময় কখনো অংশ হচ্ছে দিনের, কখনো রাতের। এভাবেই চলছে অবিরাম।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- আরেকটি বিষয়—দিনের পর আসে রাত, রাতের পর আসে দিন। রাত যখন আসে তখন অন্ধকার ঢেকে দেয় দিনের আলোকে, আবার রাত যখন বিদায় নেয় তখন দিনের আলো সরিয়ে দেয় রাতের অন্ধকার। এমনটা প্রতিদিনই হয়। সারা বছর ধরেই হয়। রাত-দিনের বিরামহীন এ চলায় একে অন্যকে খুবই দ্রুততার সঙ্গে পশ্চাদ্ধাবন করে। তাই আমরা দেখি—রাতের যেখানে শেষ, সেখানেই দিনের সূচনা; আবার যেখানেই দিনের সমাপ্তি, সেখানেই রাতের আগমন। এক মুহূর্তকালেরও ব্যবধান নেই এ দুয়ের মাঝে। পবিত্র কুরআনের বর্ণনা—

يُغْشِي الَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهٗ حَثِيْثًا.

তিনি দিনকে ঢেকে দেন রাত দিয়ে, এভাবে যে, রাত দ্রুতগতিতে দিনের পেছনে পেছনে চলে। Ñসূরা আ‘রাফ (৭) : ৫৪

সূরা রা‘দের ৩ নং আয়াতেও একই কথাÑ

يُغْشِي الَّيْلَ النَّهَارَ.

তিনি দিনকে রাত দিয়ে আচ্ছাদিত করেন।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনরাতের চব্বিশ ঘণ্টায় ঘড়ি তো একইভাবে ঘোরে। শুধু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বোঝা যাবে না—সময় এখন দিন, না রাত। ঘড়ির কাটায় যখন ছয়টা বাজে, তখন হতে পারে বিকেল, হতে পারে রাত বা সন্ধ্যা। বুঝতে হয় আমাদের বাইরের দিকে তাকিয়ে। এ হিসেবে পুরো চব্বিশ ঘণ্টাই একই রকম সময় হওয়ার কথা। কিন্তু না, আল্লাহ তাআলা এ সময়ের কিছু কিছু অংশকে বিশেষ কিছু কাজের জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন, রাতকে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন বিশ্রামের সময় আর দিনের বেলাকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন উপার্জন ও কাজের জন্য। এজন্যেই তো আমরা দেখিÑদিনের বেলা হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর রাতের বেলা পরম তৃপ্তির ঘুম—এটাই মানুষের স্বাভাবিক বাস্তবতা।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনের সকল পরিশ্রম ও ক্লান্তি হারিয়ে যায় রাতের ঘুমের পরশে। রাতের ঘুম এতটাই প্রশান্তির। এ ঘুম থেকে জেগে আমরা আবার নতুন উদ্দীপনায় নেমে পড়ি ঘামঝড়ানো পরিশ্রমের ময়দানে। এই আমাদের স্বাভাবিকতা। রাতের ঘুম যদি পরিপূর্ণ না হয়, কিংবা কোনো কারণে একটি রাত নির্ঘুম কেটে যায়, দিনের বেলা দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থেকেও রাতের ঘুমের শূন্যতা পূরণ করা যায় না। আবার  রাতের সামান্য ঘুমও ছড়িয়ে দিতে পারে দেহ-মনে অনাবিল প্রশান্তি। পবিত্র কুরআনের বর্ণনাÑ

هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَ النَّهَارَ مُبْصِرًا  اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ.

তিনি সে-ই সত্তা, যিনি  তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর এবং দিনকে করেছেন আলোয় উজ্জ্বল। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে সে লোকদের জন্যে, যারা শোনে। Ñসূরা ইউনুস (৯) : ৬৭

وَ هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الَّيْلَ لِبَاسًا وَّ النَّوْمَ سُبَاتًا وَّ جَعَلَ النَّهَارَ نُشُوْرًا.

তিনি সে-ই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্যে রাতকে পোশাকস্বরূপ, ঘুমকে বিশ্রামের মাধ্যম আর দিনকে বানিয়েছেন জেগে ওঠার সময়। Ñসূরা ফুরকান (২৫) : ৪৭

এ আয়াতেও রাতের বিশ্রামের কথাই বলা হয়েছে। চাদরের ন্যায় রাতের অন্ধকার সকলকে ঢেকে দেয়। সে অর্থে রাত যেন আমাদের পোশাক। আর অন্ধকারের চাদরে ঢাকা পড়ে মানুষ কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে বিশ্রাম করে, ঘুমিয়ে নেয়। এই তো বাস্তবতা।

সূরা কাসাসের আয়াতদুটি খুবই হৃদয়কাড়া। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—

قُلْ اَرَءَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ الَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰي يَوْمِ الْقِيٰمَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ، قُلْ اَرَءَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰي يَوْمِ الْقِيٰمَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ.

তুমি বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের ওপর রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর মাবুদ কে আছে, যে তোমাদের আলো এনে দিতে পারে? তবে কি তোমরা শুনতে পাও না? তুমি বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের ওপর দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর মাবুদ কে আছে, যে তোমাদেরকে একটি রাত এনে দেবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তবে কি তোমরা দেখতে পাও না? Ñসূরা কাসাস (২৭) : ৭১-৭২

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনের আলোয় মানুষ নানা রকম কাজকর্মে জড়িয়ে থাকে। রাতের একটি বড় অংশ কেটে যায় বিশ্রামে। দিনের আলো সরিয়ে নিজের জায়গা করে নেয় রাতের অন্ধকার। এই যে আলো-আঁধারের আবর্তন, মানুষের স্বাভাবিক জীবনে তা যে কতটা প্রভাববিস্তারকারী, উপরোক্ত আয়াতদুটিতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আয়াতদুটি থেকে এ-ও প্রতীয়মান হয়—কাজকর্ম আর পরিশ্রমের ক্লান্তি শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য উপযুক্ত সময় রাত-ই, ঠিক যেমন আয়-উপার্জনের জন্যে উপযুক্ত সময় দিন। সূরা কাসাসের পরবর্তী আয়াতটিতেই আল্লাহ তাআলা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেনÑ

وَ مِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ الَّيْلَ وَ النَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.

আপন মেহেরবানিতেই তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা রাতে বিশ্রাম করতে পার আর (দিনে) তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার; এবং যাতে তোমরা শোকর আদায় করতে পার। Ñসূরা কাসাস (২৭) : ৭৩

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনের আলোতে আমরা যে কেবলই অর্থ উপার্জন করি—এমন নয়। দিনের আলোর রয়েছে নানাবিধ উপকার। এ বিষয়টি আধুনিক গবেষণাতেও প্রমাণিত। মানুষের শরীরের অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। এ আলোতে শোভাময় হয়ে ওঠে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফসলের বাগান। এ আলো যেখানে পর্যাপ্ত থাকে না, সেখানকার ফসলও ভালো হয় না। দিনে-রাতে এই যে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্যে নানাবিধ কল্যাণ ছড়িয়ে রেখেছেন, পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে সংক্ষেপে বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে।

سَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهارَ

তিনি তোমাদের কল্যাণে রাত ও দিনকে নিয়োজিত রেখেছেন। সূরা ইবরাহীম (১৩) : ৩৩

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- মহান আল্লাহর সৃষ্টিজগত নিয়ে যারা ভাবে, তাদের জন্যে এ একটি আয়াতই যথেষ্ট। এ আয়াতটিই আমাদের সামনে মেলে ধরতে পারে আল্লাহর অতুলনীয় শক্তি ও ক্ষমতার পরিচয়। রাতদিন নিয়ে, এ দুয়ে ছড়িয়ে থাকা আল্লাহ তাআলার নানা নিদর্শন নিয়ে যারা চিন্তা করবে, আল্লাহর কুদরতের সামনে মাথা তাদের নত হবেই।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনের পর আসে রাত, রাতের পর আসে দিন। রাত যখন আসে তখন অন্ধকার ঢেকে দেয় দিনের আলোকে, আবার রাত যখন বিদায় নেয় তখন দিনের আলো সরিয়ে দেয় রাতের অন্ধকার। এমনটা প্রতিদিনই হয়। সারাবছর ধরেই হয়। রাত-দিনের বিরামহীন এ চলায় একে-অন্যকে খুবই দ্রুততার সঙ্গে পশ্চাদ্ধাবন করে। তাই আমরা দেখি রাতের যেখানে শেষ, সেখানেই দিনের সূচনা; আবার যেখানেই দিনের সমাপ্তি, সেখানেই রাতের আগমন। এক মুহূর্তকালেরও ব্যবধান নেই এ দুয়ের মাঝে।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- পবিত্র কুরআনের বর্ণনা : তিনি দিনকে ঢেকে দেন রাত দিয়ে, এভাবে যে, রাত দ্রুতগতিতে দিনের পেছনে পেছনে চলে। (সূরা আরাফ : ৫৪)। সূরা রাদের ৩ নং আয়াতেও একই কথা : তিনি দিনকে রাত দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। দিন-রাতের চব্বিশ ঘণ্টায় ঘড়িতো একইভাবে ঘোরে। শুধু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝা যাবে না, সময় এখন দিন, না রাত। ঘড়ির কাটায় যখন ছয়টা বাজে, তখন হতে পারে বিকেল, হতে পারে রাত বা সন্ধ্যা। বুঝতে হয় আমাদের বাইরের দিকে তাকিয়ে।

এ হিসেবে পুরো চব্বিশ ঘণ্টাই একই রকম সময় হওয়ার কথা। কিন্তু না, আল্লাহ তা’আলা এ সময়ের কিছু কিছু অংশকে বিশেষ কিছু কাজের জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন, রাতকে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন বিশ্রামের সময় আর দিনের বেলাকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন উপার্জন ও কাজের জন্য। এজন্যেই তো আমরা দেখিÑ দিনের বেলা হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর রাতের বেলা পরম তৃপ্তির ঘুম এটাই মানুষের স্বাভাবিক বাস্তবতা।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনের সকল পরিশ্রম ও ক্লান্তি হারিয়ে যায় রাতের ঘুমের পরশে। রাতের ঘুম এতটাই প্রশান্তির। এ ঘুম থেকে জেগে আমরা আবার নতুন উদ্দীপনায় নেমে পড়ি ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমের ময়দানে। এই আমাদের স্বাভাবিকতা। রাতের ঘুম যদি পরিপূর্ণ না হয়, কিংবা কোনো কারণে একটি রাত নির্ঘুম কেটে যায়, দিনের বেলা দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থেকেও রাতের ঘুমের শূন্যতা পূরণ করা যায় না। আবার রাতের সামান্য ঘুমও ছড়িয়ে দিতে পারে দেহ-মনে অনাবিল প্রশান্তি।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- পবিত্র কুরআনের বর্ণনা : তিনি সে-ই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করো এবং দিনকে করেছেন আলোয় উজ্জ্বল। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে সে লোকদের জন্যে, যারা শোনে। (সূরা ইউনুস : ৬৭)। তিনি সে-ই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্যে রাতকে পোশাকস্বরূপ, ঘুমকে বিশ্রামের মাধ্যম আর দিনকে বানিয়েছেন জেগে ওঠার সময়। (সূরা ফুরকান : ৪৭)।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- এ আয়াতেও রাতের বিশ্রামের কথাই বলা হয়েছে। চাদরের ন্যায় রাতের অন্ধকার সকলকে ঢেকে দেয়। সে অর্থে রাত যেন আমাদের পোশাক। আর অন্ধকারের চাদরে ঢাকা পড়ে মানুষ কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে বিশ্রাম করে, ঘুমিয়ে নেয়। এই তো বাস্তবতা।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- সূরা কাসাসের আয়াত দু’টি খুবই হৃদয়কাড়া। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : তুমি বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের ওপর রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর মাবুদ কে আছে, যে তোমাদের আলো এনে দিতে পারে? তবে কি তোমরা শুনতে পাও না? তুমি বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের ওপর দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর মাবুদ কে আছে, যে তোমাদেরকে একটি রাত এনে দেবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তবে কি তোমরা দেখতে পাও না? (সূরা কাসাস : ৭১-৭২)।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনের আলোয় মানুষ নানা রকম কাজ-কর্মে জড়িয়ে থাকে। রাতের একটি বড় অংশ কেটে যায় বিশ্রামে। দিনের আলো সরিয়ে নিজের জায়গা করে নেয় রাতের অন্ধকার। এই যে আলো-আঁধারের আবর্তন, মানুষের স্বাভাবিক জীবনে তা যে কতটা প্রভাব বিস্তারকারী, উপরোক্ত আয়াত দু’টিতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আয়াত দু’টি থেকে এ-ও প্রতীয়মান হয়, কাজকর্ম আর পরিশ্রমের ক্লান্তি শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য উপযুক্ত সময় রাতই, ঠিক যেমন আয়-উপার্জনের জন্যে উপযুক্ত সময় দিন। সূরা কাসাসের পরবর্তী আয়াতটিতেই আল্লাহ তা’আলা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন : আপন মেহেরবানীতেই তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা রাতে বিশ্রাম করতে পার আর (দিনে) তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার; এবং যাতে তোমরা শোকর আদায় করতে পার। (সূরা কাসাস : ৭৩)।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনের আলোতে আমরা যে কেবলই অর্থ উপার্জন করি এমন নয়। দিনের আলোর রয়েছে নানাবিদ উপকার। এ বিষয়টি আধুনিক গবেষণাতেও প্রমাণিত। মানুষের শরীরের অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। এ আলোতে শোভাময় হয়ে ওঠে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফসলের বাগান। এ আলো যেখানে পর্যাপ্ত থাকে না, সেখানকার ফসলও ভালো হয় না।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিনে-রাতে এই যে আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্যে নানাবিদ কল্যাণ ছড়িয়ে রেখেছেন, পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে সংক্ষেপে বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে : তিনি তোমাদের কল্যাণে রাত ও দিনকে নিয়োজিত রেখেছেন। (সূরা ইবরাহীম : ৩৩)।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন আসে এভাবে দিন-রাতের আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে পেরিয়ে যায় সপ্তাহ-মাস-দিন-বছর। কেটে যেতে থাকে আমাদের জীবন। যুগের পর যুগ, শতাব্দ, সহস্রাব্দ। দিন-রাতের এ আবর্তন চলছেই। আমাদের জীবনতো একটা সময় থেমে যায়।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দুনিয়ার বুকে নিঃশ্বাস নিতে পারার সময়টা কারো একটু বেশি, কারো কম। কম-বেশি যাই হোক, একটা সময় শেষ হয়েই যায়। কিন্তু দিন-রাতের আবর্তনের যেন শেষ নেই, চলছে তো চলছেই। কোনো বিরাম-বিশ্রামও নেই, এমনকি গতিতে ছন্দপতনও নেই। একই গতিতে চলছে দিন-রাতের এ পালাবদল।

আল কুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- দিন আর রাত চেনে নাÑ এমন কে আছে! দিনের বেলায় আলো ঝলমল আকাশ, সকালের স্নিগ্ধ বাতাস, দুপুরের প্রখর রোদ, বিকেলের নিষ্প্রভ সূর্য আর রাতের বেলায় চারিদিকে ছেয়ে যাওয়া অন্ধকার, আকাশভরা তারা, পূর্ণিমার রাতের ভরাট চাঁদ, অমাবস্যায় আবার চাঁদহীন কালো আকাশ, এসবের সঙ্গে পরিচিত নয়Ñ এমন কে আছে! এগুলো সবই আমাদের জীবনের অতি সাধারণ কিছু অনুষঙ্গ।

কিন্তু এ অতি সাধারণ বিষয়গুলোতেই আমাদের জন্যে ছড়িয়ে আছে বহু নিদর্শন, সেসব আমাদেরকে আল্লাহ তা’আলার অসীম প্রজ্ঞা ইলম আর কুদরতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। পবিত্র কুরআনে নানা আঙ্গিকে আমাদের জন্য রাত-দিনের নিদর্শনগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। লক্ষ করুনÑ

এ জগৎ এবং জগতের সবকিছু মহান আল্লাহ তা’আলারই সৃষ্টি। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেন এবং পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণও করেন। তাঁর ইচ্ছার বাইরে একটি শুকনো পাতাও গাছ থেকে ঝরে পড়তে পারে না। সে হিসেবে দিন-রাতের বিষয়টিতো আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। তবুও আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে : তিনি সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। (সূরা আম্বিয়া : ৩৩)।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- অর্থাৎ রাত ও দিন তাঁর সৃষ্টি, যেমন তিনি সৃষ্টি করেছেন চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-তারা। তাঁর সৃষ্টির বাইরে নয় জগতের কোনো কিছুই। রাত-দিনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় বিরতিহীন আবর্তন। এ আবর্তনের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা নিহিত রেখেছেন জ্ঞানীদের জন্যে উপদেশ। তিনি ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। (সূরা আলে ইমরান : ১৯০)।

এ নিদর্শন আল্লাহ তা’আলার অসীম কুদরতের নিদর্শন; তাঁর সীমাহীন শক্তি-ক্ষমতা ও রাজত্বের নিদর্শন, তিনি সর্বশক্তিমান হওয়ার নিদর্শন, তিনি যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন এবং তাঁর ইচ্ছাতেই জগতের ছোট-বড় সব বিষয় সংঘটিত হওয়ার নিদর্শন। রাত-দিনের আবর্তন যে আল্লাহ তা’আলার বহু নিদর্শনের ধারক। এ বিষয়টি পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

এসবের উপস্থাপনাও বড় বৈচিত্র্যময়। যেমন, সূরা আলে ইমরানের উপরোক্ত আয়াতে সরলভাবেই বলা হয়েছে, রাত-দিনের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে বহু নিদর্শন। সূরা বাকারার ১৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, রাত-দিনের আবর্তনের মধ্যে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। সূরা ইউনুসের ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, রাত-দিনের আবর্তনের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে মুত্তাকি সম্প্রদায়ের জন্যে।

অর্থাৎ যারা জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, তারাই চিন্তা করবে। যারা মুত্তাকি, আল্লাহ তা’আলার ভয় সর্বদা যাদের অন্তরে জাগ্রত থাকে, তারাই তো আল্লাহ তা’আলার কুদরত ও ক্ষমতা নিয়ে ভাববে। এ ভাবনা-চিন্তাই জ্ঞানী বুদ্ধিমান ও মুত্তাকিদের সামনে আল্লাহ তা’আলার পরিচয় তুলে ধরবে; আল্লাহ তা’আলার ক্ষমতা ও রাজত্বের বিশালতা, এ জগতে তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয় ফুটিয়ে তুলবে। এর ফলশ্রুতিতে তারা মহান প্রভুর দরবারে লুটিয়ে পড়বে অধিকতর বিনয়ী মন নিয়ে কৃতজ্ঞতার সিজদায়।

আলকুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত:- কোনো কোনো আয়াতে আবার রাত ও দিনের বিভিন্ন অবস্থার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা’আলার অপরিসীম ক্ষমতা ও শক্তির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন : আপনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান আর দিনকে প্রবেশ করান রাতে। (সূরা আলে ইমরান : ২৭)।

একেবারে আমাদের চোখে দেখা এক বাস্তবতা। গ্রীষ্মকালে দিন হয়ে যায় অনেক দীর্ঘ, আর রাত হয়ে পড়ে অনেক ছোট। দিন-রাত কোনোটাই বার ঘণ্টায় থাকে না। আবার ক’দিন পর যখন শীতকাল আসে, তখন রাত হয়ে যায় দীর্ঘ, দিন হয়ে পড়ে ছোট। গ্রীষ্মকালের দিনের শুরু ও শেষের অংশটুকু শীতকালে রাতের অংশ হয়ে পড়ে। আবার শীতকালের রাতের শুরু-শেষের বেশ কিছু সময় গ্রীষ্মকালে দিনের অংশ হয়ে যায়। এভাবে দিন ঢুকে যায় রাতের মধ্যে, রাত ঢুকে যায় দিনের মধ্যে। ঘড়ির কাটায় একটা নির্দিষ্ট সময় কখনো অংশ হচ্ছে দিনের, কখনো রাতের। এভাবেই চলছে অবিরাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *